স্পেস-এক্স (SpaceX) এর চপস্টিক সিস্টেমের আদ্যপান্ত
Date: 15th October 2024, 12:00PM
Showaib bin Nasir
আমরা সবাইতো স্পেসএক্স এর স্টারশিপ বুস্টার ল্যান্ডিং এর ভিডিওটি দেখেছি। পুরো বিশ্ব অবাক চোখে দেখেছে কিভাবে একটি রকেট বুস্টার ভূমি স্পর্শ না করেই তার আর্মস দিয়ে লঞ্চিংপ্যাড ধরে ফেলেছে। এই অনবদ্য সিস্টেমকে স্পেস এক্স কিংবা আমাদের এলন মাস্ক সাহেব নাম দিয়েছেন চপস্টিক সিস্টেম।
এই ভিডিওটি যেমন সবাই অবাক চোখে দেখেছে তেমনি সবার মাঝে কৌতূহলও সৃষ্টি করেছে যে কেনো এই সিস্টেম আবিষ্কার করলো? চলেন আজকে আলোচনা করা যাক এই চপস্টিক সিস্টেম বানানোর কারণ, সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ'স।
তার আগে জেনে নেওয়া যাক এতদিন কিভাবে রকেট ল্যান্ড করতো। একদম শুরুতে যে রকেটগুলো উৎক্ষেপণ করা হতো সেগুলো মূলত একবার ব্যাবহার করা যেত অর্থাৎ একমুখী পক্রিয়া ছিলো। সাধারণত, রকেটের প্রথম ধাপটি ( যেখানে মূল ইঞ্জিন থাকে ) উৎক্ষেপণের পরে মহাকাশযানকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত এবং তা বাতাসের গতি এবং চাপের কারণে সমুদ্রে কিংবা ভূমিতে আছড়ে পরতো। যার কারণে বুস্টারে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো ডেব্রিসে পরিণত হতো এবং তা পূর্ণব্যাবহারের অযোগ্য হয়ে পারতো। প্রতিবার রকেট পাঠানোর জন্য নতুন নতুন বুস্টার বানানো অনেক খরচ এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো। তার উপর প্রতিবার নতুন রকেট তৈরির কারণে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ ও অন্যান্য বর্জ্য সৃষ্টি হতো যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি স্বরূপ ছিল। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য স্পেসএক্স রি-ইউজেবল বা পুনঃব্যবহারযোগ্য সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের জন্য নেমে পরে।
এর ধারাবাহিকতায় নতুন এক আবিষ্কার নিয়ে হাজির হয়েছিলো স্পেসএক্স। বিশেষ করে ফেলকন ৯ এর কথা বলি এই রকেট বিশ্বের প্রথম রি ইউজেবল রকেট যা পুনরায় পৃথিবীতে সফলভাবে ফেরত আসার সক্ষমতা রাখে এবং সে সাথে এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং প্রযুক্তিগতভাবে উদ্ভাবনীও বটে। এই রকেট উৎক্ষেপণের পর বুস্টার মহাকাশযানকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে তার থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরে একই ইঞ্জিন ব্যাবহার করে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে নিখুঁতর করডিনেটে নেমে আসে এবং খাঁড়াভাবে ল্যান্ডিংপ্যাডে অবতরণ করে। যার ফলে বুস্টারের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না সেই সাথে বড় কথা হলো এটি পুনঃব্যবহারযোগ্য থাকে। এই আবিষ্কার মহাকাশ অভিযানের খরচ অনেক গুনে কমিয়ে এনেছে। তবে এখানেও কিছু সমস্যা আছে। যেমন ল্যান্ডিং এর জন্য আলাদা ল্যান্ডিং গিয়ার লাগানো লাগে যেটা অপারেট করার জন্য লাগে অতিরিক্ত ফুয়েল কারণ এই ল্যান্ডিং গিয়ারগুলো সাধারণত অনেক বেশি ভারী হয়ে থাকে। তাছাড়াও বুস্টার অবতরণের সময় এর থ্রাস্টের চাপ এতই বেশি থাকে যে আশে পাশের গ্রাউন্ড এলিমেন্টস গুলো বুস্টারে হিট করে ফলে কিছু ডেমেজ ও হয় বুস্টারের যার কারণে এগুলোকে আবার মডিফিকেশন বা রিপেয়ারে পাঠানো লাগে। কিন্তু আমাদের এলন সাহেবের লক্ষ হলো এই বুস্টার গুলো যাতে পৃথিবীতে ফেরত আসার পর পরেই আবার পাঠানোর জন্য রেডি হয়ে যায়। যার দরুন এই অনবদ্য আইডিয়া, চপস্টিক সিস্টেম জেনারেট করে ফেলে সে। এই সিস্টেমে মূলত ৪টি হাত আছে যার মাধ্যমে বুস্টার ভূমিতে অবতরণ না করেই একটি নির্দিষ্ট উচ্চতাতে ল্যান্ডিংপ্যাডকে ( এই সিস্টেমের জন্য বানানো টাওয়ার) ধরে ফেলবে। এতে ল্যান্ডিং গিয়ারের ঝামেলাও থাকলো না আর খরচও অনেকাংশে কমে গেলো। তবে এই সিস্টেমের জন্য এক্সট্রিম একিউরেসি, প্রপার কেলকুলেশন, টাইমিং এবং সিঙ্ক্রোনাইজেশন দরকার ছিলো যা অবতরনের ভিডিওতে দেখলাম স্পেসএক্স খুব ভালো ভাবে মেনেজ করে ফেলেছে। এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণাকে এবং এর পিছনের ইঞ্জিনিয়ারিংকে আরো অনেক অনেক দূর নিয়ে যাবে বলে মনে করি সাথে এখন অন্য গ্রহেও এই একই সিস্টেম ব্যাবহার করে রি-ইউজেবল স্পেস কম্পোনেন্ট ব্যাবহার করা যাবে।